মোঃ আজগার আলী, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য কমে যাচ্ছে ২০ ভাগ বিশুদ্ধ পানি জলবায়ু বিষয়ক জাতিসংঘের প্যানেলের গবেষণা বলছে, প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ২০ ভাগ বিশুদ্ধ পানি কমে যাচ্ছে। ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবসে পানি অধিকার প্রচারাভিযানের আওতায় উপকূলীয় সকল মানুষের জন্য নিরাপদ পানির দাবিতে সাতক্ষীরায় আয়োজিত নাগরিক আলোচনায় এমন আরো উদ্বেগজনক ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে অনুষ্ঠানের বক্তাদের কাছ থেকে।
প্রান্তজন-স্বদেশ-সংশপ্তক, পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক-প্রাণ এবং একশনএইড বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা বলেন, কৌশলগত পরিকল্পনার দূর্বলতায় দেশের উপকূলীয় ১৯টি উপকূলীয় জেলার সমগ্র অঞ্চলসহ দেশের নানা স্থানে মানুষের সুপেয় পানির অধিকার নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীব্যাপী আশংকাজনক হারে সুপেয় পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। বাংলাদশে কৃষি কাজে ব্যবহৃত মোট পানির ৭৮ ভাগই ভূগর্ভস্থ পানি এবং যে হারে এই পানি উত্তোলন করা হয় সেই হারে প্রাকৃতিকভাবে পানি মাটির নিচে সেসব ভূগর্ভস্থ অ্যাকুইফায়ারে যুক্ত হয় না।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গিয়াস উদ্দীন সরদার। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ মানুষের জন্য পানির কোনো-না-কোনো উৎস থাকলেও নিরাপদ বা সুপেয় পানি পাচ্ছে শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষ। গত কয়েক দশকে জনপ্রতি মিঠাপানির পরিমাণ ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং দূর্বল ব্যবহার ব্যবস্থাপনা, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির প্রাপ্যতা এবং গুণমান দ্রুত অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় জনগন বিশেষ করে ক্ষুদ্র কৃষক, নারী, শিশুরা নিরাপদ পানির সংকটে জর্জরিত, যারা ইতোমধ্যেই তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন।
স্বদেশ, প্রাণ সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত এই নাগরিক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন, শ্যামল বিশ্বাস, নাজমুল আলম মুন্না, মহুয়া মঞ্জুরী, রুবেল হাসান, শিক্ষক ফজলুল হক, আব্দুস সামাদ, আদিত্য মল্লিক, পবিত্র মোহন দাস, নিত্যানন্দ সরকার, ওবাদেস সুলতান বাবলু, আবুল কালাম আজাদ, অধ্যক্ষ আশেক-ই এলাহি, প্রফেসার মোজাম্মেল হক, অধ্যক্ষ আব্দুল ওয়াহেদ প্রমুখ।
আগত বক্তারা আরোও বলেন, খাদ্য মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার হলেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ বিভিন্ন কারনে তার জনগনের খাদ্য, সুপেয় পানি ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিসশিম খাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে “রুপকল্প-২০৪১”-এর আলোকে জাতীয় কৃষি নীতি, খাদ্য নিরাপত্তা আইন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২০৩০ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ সহ অন্যান্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই কৃষি প্রধান দেশের সর্বত্র পানির সঠিক ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই।
অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আয়োজক প্রতিষ্ঠানের প্রধান মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, প্রতি বছর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার জন্য একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয় যার এবারকার প্রতিপাদ্য “পানিই জীবন, পানিই খাদ্য; কাওকে পেছনে ফেলে নয়”। এই প্রতিপাদ্যের মূল লক্ষ্য পৃথিবীতে জীবনের জন্য পানির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে সামনে নিয়ে আসার মাধ্যমে বিশ্বে খাদ্যের ভিত্তি হিসেবে পানিকে তুলে ধরা। এই দিবসকে ঘিরে গৃহীত কর্মসূচি পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে কারন পানি কেবল বেঁচে থাকার জন্যেই অপবিহার্য নয়, সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।